বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে দুলাভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছিল লামিয়া নামের এক কিশোরী। বড় চাচা হারুন মিনা তাকে দূরে গিয়ে আস্তে কথা বলতে বলেন। চাচার কথা না শুনে লামিয়া সেখানে দাঁড়িয়েই কথা বলছিল। একপর্যায়ে হারুন ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। শুরু হয় চাচা-ভাতিজির বাগ্বিতণ্ডা।
মেয়ের পক্ষ নিয়ে স্বামীর বড় ভাইয়ের সঙ্গে তর্কে জড়ান লামিয়ার মা বিউটি বেগম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হারুন ভাতিজি লামিয়া ও তার মাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। পরে হারুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে।
এই হত্যার ঘটনাটি ঘটে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি, গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে।
এভাবে আপাতদৃষ্টিতে ছোটখাটো অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় খুনের ঘটনা ঘটছে। গত তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) প্রথম আলোয় প্রকাশিত ৭৯টি খুনের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ‘তুচ্ছ’ কাএসব খুনের ঘটনা সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খ. মহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেশি ব্যবহারের কারণে তুচ্ছ ঘটনার জেরে মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বেশি ব্যবহার মানুষের জীবন ও চিন্তাকে আগ্রাসী করে তুলছে। সামাজিক মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবির মতো ঘটনা ঘটছে। রণে অন্তত ১৫টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসব খুনের ঘটনা সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খ. মহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেশি ব্যবহারের কারণে তুচ্ছ ঘটনার জেরে মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বেশি ব্যবহার মানুষের জীবন ও চিন্তাকে আগ্রাসী করে তুলছে। সামাজিক মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবির মতো ঘটনা ঘটছে। টাঙ্গাইলের সখীপুরে গত ফেব্রুয়ারিতে বাবা আবদুস সামাদ আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে তাঁর কিশোর ছেলে। পুলিশ বলছে, ছেলে নেশার জন্য মায়ের কাছে টাকা চেয়েছিল। টাকা না পেয়ে মাকে রামদা দিয়ে মারার জন্য ঘোরাঘুরি করছিল। ভয়ে মা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে বাবা বাড়ি এলে ছেলে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় পুলিশ ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাকে কিশোর সংশোধনকেন্দ্রে পাঠানো হয়।
একই মাসে পটুয়াখালীর বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের রামবল্লভ গ্রামে নিজ সন্তানকে হত্যা করেন মা। আরও অভিযোগ, তাঁকে সহায়তা করেন শিশুর চাচা। পুলিশ বলছে, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তাঁরা এই কাজ করছেন বলে উভয় আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদন বলছে, তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তিন নারীকে। যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে পাঁচ নারীকে। এ ছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২৩ জন। কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৩৫ জন। আর গণপিটুনিতে মারা গেছেন ১৭ জন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সময়ে সংঘটিত হত্যার ঘটনাগুলোয় সমাজের মধ্যে চলমান সামাজিক সম্পর্কের ভঙ্গুরতা প্রকাশ পাচ্ছে। মানুষ তুচ্ছ কারণে রুষ্ট হয়ে অন্যের অধিকার হরণ করছে, অন্যকে আঘাত করছে, হত্যা করছে কিংবা মনস্তাত্ত্বিক পীড়ন দিচ্ছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের পরিধি ও তাৎপর্যের বিষয় গুরুত্ব না দিয়ে বর্তমান সময়ে মানুষ ব্যক্তিগত স্বার্থ ও উদ্দেশ্য দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত।
তৌহিদুল হক আরও বলেন, যে ঘটনা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্বমূলক শিষ্টাচারের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনোখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলা প্রভৃতির মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।